SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

কোন তাপমাত্রা সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট উভয় স্কেলে একই সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায়?

Created: 2 years ago | Updated: 2 years ago

তাপীয় সমতা

তাপ হচ্ছে শক্তির একটি রূপ যা বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তির সাথে সম্পর্কিত। দুটি বস্তুকে পরস্পরের সংস্পর্শে আনলে তাপের আদান প্রদান ঘটতে পারে। এই আদান প্রদান ঘটবে কীনা তা নির্ভর করবে বস্তুদ্বয়ের তাপীয় অবস্থার উপর।

একটি উত্তপ্ত বস্তুকে যদি খোলা জায়গায় রাখা হয় তাহলে বন্ধুটি পরিবেশে তাপ হারিয়ে শীতল হতে থাকে। আবার শীতল কোনো বস্তুকে খোলা জায়গায় রাখলে পরিবেশ থেকে তাপ গ্রহণ করে গরম হতে থাকে। কিছুক্ষণ তাপের এই আদান প্রদান চলতে থাকে। যখন আর তাপের আদান প্রদান হয় না অর্থাৎ বস্তু তাপ বর্জন করে না বা গ্রহণ করে না, আমরা তখন বলি বস্তুটি পরিবেশের সাথে তাপীয় সমতায় এসেছে। দুটি বস্তু যদি তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকে তাহলে তাদের মধ্যে তাপের আদান প্রদান হয় না। যে অবস্থায় পরস্পরের সংস্পর্শে থাকা বস্তুগুলোর মধ্যে তাপের আদান প্রদান ঘটে না তাকে তাপীয় সমতা বলে। কোনো বস্তু বা সিস্টেম যদি পরিবেশের সাথে তাপীয় সমতায় থাকে, তাহলে পরিবেশের সাথে ঐ সিস্টেমের তাপের কোনো আদান প্রদান হবে না। তাপের আদান প্রদান যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে তা হচ্ছে বস্তু বা সিস্টেমের তাপীয় অবস্থা, যাকে বলা হয় তাপমাত্রা। তাপমাত্রার পার্থক্য থাকলেই কেবল তাপের আদান প্রদান ঘটবে, তাপের পরিমাণ যাই থাকুক না কেন তাপমাত্রার পরিবর্তন না ঘটলে তাপীয় সমতা বিঘ্নিত হবে।

লক্ষ্য কর : কাপে গরম চা বা দুধ রেখে দিলে কিছুক্ষণ পর তা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ফ্রিজ থেকে বের করে ঠাণ্ডা বস্তু বা খাবার টেবিলে রাখলে কিছুক্ষণ পর গরম হয়ে যায়। আসলে কী ঠাণ্ডা বা গরম হয়।

তাপমাত্রার ধারণা

তাপমাত্রা বা উষ্ণতা হচ্ছে বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা নির্ধারণ করে বস্তুটিকে অন্য বস্তুর তাপীয় সংস্পর্শে রাখলে তাপ দেবে না নেবে। আমরা অনেক সময় হাত দিয়ে কোনো বস্তুর উষ্ণতা বুঝতে চেষ্টা করি। কিন্তু স্পর্শ দ্বারা সব সময় বস্তুর উষ্ণতা বা তাপমাত্রা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব হয় না ।

করে দেখো : ঘরের মধ্যে এক টুকরা কাঠ ও এক টুকরা লোহা কিছুক্ষণ পাশাপাশি রেখে তারপর তাদেরকে স্পর্শ কর। কী দেখলে?

লোহাকে কাঠের চেয়ে অধিকতর শীতল মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে এগুলো একই পরিবেশে থাকায় তাপীয় সমতায় আছে এবং একই তাপমাত্রা বা উষ্ণতায় আছে।

পরীক্ষা : তিনটি পাত্রে পানি নাও। একটিতে বরফগলা ঠাণ্ডা পানি, একটিতে ঈষদোষ্ণ গরম পানি আর অন্যটিতে সাধারণ পানি তথা কক্ষ তাপমাত্রার পানি। এখন এক হাত ঠাণ্ডা পানিতে এবং অপর হাত গরম পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখো। এরপর উভয় হাত কক্ষ তাপমাত্রার পানিতে ডুবাও। কী অনুভব করলে?

কক্ষ তাপমাত্রার পানি তোমার ঠাণ্ডা পানিতে রাখা হাতের কাছে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ এবং গরম পানিতে রাখা হাতের কাছে অপেক্ষাকৃত শীতল মনে হয়। এ থেকে বোঝা যায় শুধু স্পর্শানুভূতি দ্বারা উষ্ণতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব নয় । আবার স্পর্শ দ্বারা কোনো সময় উষ্ণতার পার্থক্য ধরা পড়লেও মান নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। যেমন কারো জ্বর হলে হাত দিয়ে স্পর্শ করে আমরা মোটামুটি বলতে পারি জ্বর এসেছে, কিন্তু জ্বরের পরিমাণ বের করা যায় না। তাই আমাদের যন্ত্রের প্রয়োজন হয় । উষ্ণতা বা তাপমাত্রা নির্ণয়ের এই যন্ত্রের নাম থার্মোমিটার।

 

তাপমাত্রার পরিমাপ

যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুর তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় এবং বিভিন্ন বস্তুর তাপমাত্রার পার্থক্য নির্ণয় করা যায় তাকে থার্মোমিটার বলে।

থার্মোমিটার তথা উষ্ণতা পরিমাপের যন্ত্র নির্মাণে আমাদের এমন পদার্থের প্রয়োজন হয় উষ্ণতা পরিবর্তনে যার কোনো না কোনো ধর্মের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়। আমরা জানি, তাপ প্রয়োগে অর্থাৎ উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সাধারণত কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন বাড়ে, তড়িৎ পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায়, কোনো বস্তু থেকে নির্গত আলোর বর্ণের পরিবর্তন হয়। সুতরাং বস্তু বিশেষের এ জাতীয় বিশেষ বিশেষ ধর্ম লক্ষ্য করে উষ্ণতা নির্ণয় করা যায়।

উষ্ণতার পরিবর্তনে পদার্থের যে বিশেষ বিশেষ ধর্ম নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয় এবং যে ধর্মের পরিবর্তন লক্ষ্য করে সহজ ও সুক্ষ্মভাবে উষ্ণতা নির্ণয় করা যায় তাকে উষ্ণতামিতি ধর্ম বলে। 

যে সকল পদার্থের উষ্ণতামিতি ধর্ম ব্যবহার করে থার্মোমিটার তৈরি করা হয় তাদেরকে উষ্ণতামিতি পদার্থ বলে।

বিভিন্ন পরিসরের উষ্ণতা নির্ণয়ের জন্য সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন উষ্ণতামিতি পদার্থ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত উষ্ণতামিতি পদার্থের বা তার ধর্মের ওপর ভিত্তি করে থার্মোমিটারের নামকরণ করা হয়। যেমন পারদ থার্মোমিটার, রোধ থার্মোমিটার, গ্যাস থার্মোমিটার প্রভৃতি ।

থার্মোমিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য একে দাগাঙ্কিত করতে হয়। এই দাগাঙ্কনের জন্য দুটি বিশেষ বিন্দু নির্দিষ্ট করা হয় যাদের সহজে পুনরায় উৎপন্ন করা যায়। এদের স্থির বিন্দু বলা হয়।

নিম্ন স্থির বিন্দু : যে তাপমাত্রার প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ বরফ পানির সাথে সাম্যাবস্থায় থাকতে পারে অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ বরফ গলতে শুরু করে তাকে নিম্ন স্থির বিন্দু বা বরফ বিন্দু বলে।

 

ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু : যে তাপমাত্রায় প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ পানি জলীয় বাষ্পের সাথে সাম্যাবস্থায় থাকতে পারে বা যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে তাকে ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু বা স্টিম বিন্দু বলে। 

ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু ও নিম্ন স্থির বিন্দুর মধ্যবর্তী তাপমাত্রার ব্যবধানকে মৌলিক ব্যবধান বলে। এই ব্যবধানকে সুবিধাজনক কতগুলো সমান ভাগে বিভক্ত করে এক একটি ভাগকে উষ্ণতাজ্ঞাপক সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। একে বলা হয় তাপমাত্রার স্কেল।

তাপমাত্রার স্কেল নির্ধারণের সময় পদার্থের উষ্ণতামিতি ধর্ম কাজে লাগানো হয়। ধরা যাক, বরফ বিন্দু ও স্টিম বিন্দুর তাপমাত্রা যথাক্রমে θice এবং θstream এবং এই দুই তাপমাত্রায় উপরোক্ত কোনো একটি ধর্মের মান যথাক্রমে Xice এবং Xstream। এখন অন্য কোনো তাপমাত্রা θ তে ঐ ধর্মের মান যদি X θ হয় এবং মৌলিক ব্যবধানকে যদি N টি সমান ভাগে ভাগ করা হয়, তাহলে ঐ তাপমাত্রা   θ এর মান হবে,

θ-θiceθstream-θice =Xθ-XiceXstream-Xice

θ-θiceN=Xθ-XiceXstrem-Xice  (1.1)

বিভিন্ন স্কেলে থার্মোমিটার দাগাঙ্কিত করার জন্য (1.1) সমীকরণ ব্যবহার করা হয়। তাপমাত্রার নানা প্রকার স্কেল প্রচলিত আছে। বিভিন্ন স্কেলে এই বরফ বিন্দু ও স্টিম বিন্দুর তাপমাত্রাকে বিভিন্ন ধরা হয়েছে।

Content added || updated By

Related Question

View More